# ২৫০ শয্যায় ভর্তি ৬১৯ রোগি # অধিকাংশ ডায়রিয়া, সর্দি, জ্বরে আক্রান্ত # বিশুদ্ধ পানি, লেবুর শরবত, ডাব খাওয়ার পরামর্শ

কক্সবাজার জেলায় তীব্র গরমজনিত রোগের প্রকোপ

এম বেদারুল আলম •

গরমের তীব্রতা বেড়েই চলছে। গত ২ সপ্তাহের প্রচন্ড গরমে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে প্রাণিকূল। মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে সারাদেশের মত কক্সবাজারেও।

কয়েকদিন যাবৎ তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামছে না। চরম দূভোর্গে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষের। গরমের কারণে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে তাপজনিত রোগির সংখ্যা। শহরের প্রাইভেট হাসপাতালের পাশাপাশি সদর হাসপাতালে রোগির চাপ সামলাতে ত্রাহি অবস্থা চিকিৎসকদের।

গতকাল ও কক্সবাজারে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। গরমের তীব্রতা আরো ৪/৫ দিন থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গরমের তীব্রতার কারণে এমনিতে নিম্নআয়ের মানুষ চরম দূর্বিসহ জীবন কাটছে উপরন্তু তাপজনিত রোগের কারণে পরিবারে চলছে ত্রাহি অবস্থা।

দৈনিক ৫শ রোগিকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের। মানবেতর জীবন চলছে জেলাজুড়ে। গরম, নিত্যপণ্যের দামের উর্ধমূখিতা, রোগের তীব্রতা সব মিলিয়ে জীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আশিকুর রহমান জানান, গরমের কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রতিদিনই রোগির ভীড় বাড়ছে। আমাদের হাসপাতালে ২৫০ শয্যার কিন্তু রোগি ভর্তি রয়েছে (গতকাল সকাল ১১টা পর্যন্ত) ৬১৯ জন। যেভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে রোগি আরো বাড়তে পারে। ভর্তি হওয়া রোগির মধ্যে ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টজনিত রোগির সংখ্যা বেশি। বিশেষ করে শিশু ওয়ার্ডে ডায়রিয়া, সর্দি, জ্বরের রোগি ক্রমাগত বাড়ছে। তিনি রোগ থেকে রক্ষা পেতে বিনা কারণে গরমে বাইরে না যাওয়া, প্রচুর পরিমানে পানি পান করা, ফলের রস পান এবং পরিস্কার পরিছন্ন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি বলেন-ভাইরাসজনিত জ্বর, ডায়রিয়া, সর্দি-কাঁশি শিশুদের বেশি আক্রমন করছে। এছাড়া হিটস্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে। ফলে আপাতত গরমে বাড়ির বাইরে বের হতে না পারলে ভাল।

তিনি আরো জানান- ভর্তি রোগির পাশাপাশি গতকাল আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছেন রেকর্ড ৭০০ জন রোগি। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ৩৫ জন রোগি। রোগির চাপ আরো কয়েকদিন থাকতে পারে বলে তিনি জানান।

কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজের সহকারি অধ্যাপক, সংক্রমন রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ শাহজাহান নাজির বলেন-তীব্র গরমের কারণে সাধারণত হিট এলার্জি, হিট এক্সোসন, হিট ক্রাম এবং হেপাটাইটিস-বির সমস্যা প্রকট হয়। এ সংক্রান্ত রোগি বেড়েছে সদর হাসপাতালে।

বিশেষ করে ঘামের কারণে হিট এলার্জির প্রকোপ দেখা যাচেছ। এ রোগসমুহ থেকে বাচঁতে হলে পারতপক্ষে গরম এড়িয়ে চলা বিশেষ করে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত গরম এড়িয়ে চলা, দৈনিক ৩-৪ লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত।

পাশাপাশি ডায়রিয়ার কারণে পানিশূণ্যতা হলে কিডনি রোগ জটিল হতে পারে। এজন্য প্রচুর পরিস্কার ও বিশুদ্ধ পানি পান জরুরি। সাধারনত গরম ও ঠান্ডা মিশে এ সময় রোগ বৃদ্ধি পায়। এক্ষত্রে ডাব, লেবুর শরবত এবং বিশুদ্ধ পানি পানের বিকল্প নেই। তিনি গরমজনিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে সচেতনতার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

এদিকে অসহনীয় গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জীবনযাত্রা। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা দুর্বিষহ দিন অতিবাহিত করছে। মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিও হাসফাঁস করছে। ঘরে বাইরে কোথাও স্বস্থি নেই। প্রখর রোদে সাধারণ শ্রমিকদের জীবন চলছে দূর্বিসহ। গত কয়েক দিন থেকে হঠাৎ করে তাপমাত্রা বাড়ায় ঘরে ঘরে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। দিনমজুর, রিক্সা চালক, খেত-খামারিরা প্রচন্ড রোদের কারণে চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছে।

কক্সবাজারের কয়েকজন চিকিৎসক বলেন, গরমজনিত রোগের কারণে হাসপাতালে রোগির সংখ্যা বেশি। গরমে রোটা নামক ভাইরাসের আক্রমনের কারণে ডায়রিয়া রোগি বেড়ে যায়। এ সময় পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। তরল খাবারের পাশাপাশি রিহাইড্রেশন স্যালাইন খাওয়াতে হবে। গরমে শিশুর ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও জ্বরের প্রভাব বেশি হবে স্বাভাবিক। শিশুদের এসব রোগ থেকে মুক্ত রাখতে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।

নিত্যপণ্যের দামের উধ্বগতির কারণে এমনিতে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন চলছে অর্ধাহারে-অনাহারে। এরমধ্যে যুক্ত হয়েছে তাপজনিত রোগের প্রার্দূভাব। এ সময় সরকারি ত্রাণসহায়তা কিছুটা অপ্রতুল হওয়ায় নিরব আহাজারি চলছে অনেক পরিবারে। ঘরে ঘরে রোগির সংখ্যা বাড়লেও আয় বন্ধ থাকা এ সব পরিবারে ত্রাণ তৎপরতা বৃদ্ধি জরুরী। এ ব্যাপারে প্রশাসনের আরো গতিশীল সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা উচিত বলে মনে করেন সচেতনমহল।